ছোটবেলায়, এবং এখনও আম্মুর কাছে বেশ গল্প শোনা হয় নবিজী(স) এর সময়কার। সবসময়ই আকর্ষণের বিন্দুতে থাকতো এইসব গল্প, কিন্তু কোনো বিশাল সীরাহ বা অতিদীর্ঘ কোনো কাহিনী পড়তে আগ্রহ ছিল না। তবে এ বই পড়ার পর আগ্রহ কিছুটা হলেও বেড়েছে, আগ্রহের বিক্রিয়াতে যেন প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বইটি! আবার মনে হত আমি এই গল্পগুলো ছোট ভাইবোনকে কিংবা পরবর্তী প্রজন্মকে ঠিক ঠিক বলতে পারব তো?! আম্মুর মত এতটা সুন্দর করে? এখন হয়তো হালে পানি পাব কিছুটা!
বইটিতে নবিজী(স) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পরবর্তী জীবন সহ জীবদ্দশার বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে; প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা হয়তো ঘটনাগুলি প্রায় সবই জানেন। কিন্তু সম্ভবত লেখকের যে টার্গেট অডিয়েন্স অর্থাৎ তরুণরা এক্ষেত্রে বেশ লাভবান হবে। আমার মত অলসরা তো আরো বেশি!
এক্ষেত্রে বইটিতে ছোট ছোট উপাখ্যানে বর্ণিত হয়েছে বিশাল আখ্যান। এতে মোট ২১টি অধ্যায় আছে; তবে বিচলিত হবেন না। অধ্যায়গুলো বেশ ছোট ছোট যাতে আমাদের অলসতা জেঁকে না বসে, এ বিষয়টা বেশ ভাল লেগেছে। নবিজী মুহাম্মদ(স) এর পারিবারিক বিষয়াদি হতে শুরু করে শত্রুর মোকাবিলা সব ক্ষেত্রেরই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে ১৪০ পৃষ্ঠার হালকা(কিন্তু শব্দে ভারী) এ বইটিতে।
 |
| পড়ে দেখতে পারেন ১৪০ পৃষ্ঠার বইটি |
নবিজী(স) যে ছিলেন নীতিতে অটল, কিন্তু হৃদয়ে কোমল। সত্যবাদীতার উজ্জ্বল নিশান যিনি বয়ে বেড়িয়েছেন সারাটি জীবন আর যাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছেন কত মুমিন-মুসলিম, সাহাবিগণ, আর তাঁরই সৌভাগ্যবান উম্মত আমরা। উম্মাতে রাসুলুল্লাহ(স), আলহামদুলিল্লাহ!
তিনি যে শান্তি রক্ষা করতে চেয়েছেন, নিরুপায় না হওয়া পর্যন্ত জড়াননি যুদ্ধে, কিংবা সকলের দৃষ্টিতে না থাকা কৃশকায় জুলাইবিবের(রা) প্রস্থানে হয়েছেন আবেগপ্রবণ। আবার শত্রুর মোকাবিলায় লড়েছেন বীরদর্পে, এদিকে দুখীর জন্যে-আপনজনের জন্যে কেঁদেছে তাঁর প্রাণ। অপরদিকে মানবজাতির মহান নেতা হয়েও চাপিয়ে দেননি কোনো সিদ্ধান্ত; অপরের মত প্রকাশের জন্য রেখেছেন পর্যাপ্ত সুযোগ। পুরো তায়েফবাসীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অসাধারণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁর উদ্দেশ্যের কথা ভুলে যাননি, ভুলে যাননি যে তিনি এসেছেন দাওয়াত দিতে, অভিশাপ দিতে নয়!
শুধু মুসলিমরা নন-অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পড়ে দেখতে পারেন ছোট্ট কিন্তু বিশাল ভাবাদর্শের এ বইটি; অল্প কথায় জানতে পারবেন পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির নানা ঘটনা!
একটা বিষয় সবসময়ই আমাকে আন্দোলিত করে "হিদায়াত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে"-ব্যাপারটি! একথা যে কতখানি সত্য, কতখানি অনিবার্য তা নবিজী(স) এর চাচা আবু তালিব এর ঘটনা থেকেই বোধগম্য হয়! নিজের অতি কাছের মানুষ, প্রিয় চাচাজান আলিঙ্গন করে নিতে পারেননি ইসলামের শান্তির চাদরকে। নবিজী(স) বহু চেষ্টাতেও মৃত্যুশয্যায় তিনি পড়েননি কালিমা। অথচ আল্লাহর হিদায়াতের পথে, আলোর পথে এগিয়েছেন একসময়কার ইসলামের বিপক্ষের প্রতাপশালী হযরত উমর (রা) যিনি তাঁর প্রতাপ পরবর্তী জীবনে ইসলামের পক্ষে খুব ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছেন। এসব কথা টেনে এনে বলতে চেয়েছি কেননা নবি মুহাম্মদ(স) মানবজাতির মহান শিক্ষক, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর এখতিয়ারের বাইরে যেতে পারেন না। আল্লাহ তায়ালা এসব ঘটনায় সেটারই উপলব্ধি প্রদান করেছেন।
লেখকের লেখা আমি পছন্দ করি, তার লেখায় তৃপ্তি খুঁজে পাই। তবে কারোর-ই ডাই হার্ড ফ্যান না আমি, লেখা বিবেচনায় অনেকেরই ভক্ত, আর সেকারণেই তিনিও প্রিয়। প্রথমত এই বই কেনার আপাতত কোনো ইচ্ছা ছিল না, পড়লেও পাঠ-প্রতিক্রিয়া পড়ে তারপর হয়তো সিদ্ধান্ত নিতাম। কিন্তু লেখকের ফেসবুক টাইমলাইনে বইয়ের প্রথম কাহিনীটি (সেটাই প্রথম, বই হাতে নিয়ে জানতে পারি) পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি জীবন যেখানে যেমন এর সাথে এটিও কিনব। তারপর যথারীতি বই হাতে পাওয়ার পর এই বইটি জীবন যেখানে যেমন এর চেয়ে হয়তো কম আকর্ষণীয় হবে ভেবে এটিই আগে পড়া শুরু করি; আর এখন মনে হচ্ছে এটিই বেশি আকর্ষণীয়।
কিছু ক্ষেত্রে শব্দ-অলংকারের একটু বেশি ব্যবহার হয়েছে কি? যদিও সেটা আবেগ কিংবা তাৎপর্য ধরে রাখতে সহায়ক হবে, তবুও কিছু জায়গায় অলংকার-উপমা বেশি লেগেছে। (নাকি আমার পরবর্তী পাতার কাহিনীতে যাওয়ার কৌতুহল এমনটা ভাবিয়েছে?!)
আমার রিভিউয়ে কোনো প্রকার ভুল কিংবা শরী'য়া বিরোধী কোনো কথা বলে থাকলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট বক্স বা ইনবক্সে জানাবেন, ইনশাআল্লাহ আমি শুধরে নিব!
-------দি এন্ড অভ ইটারনিটি পড়তে পড়তে ঘুম ধরতেসিল (কঠিন লাগতেসে পড়তে -_-); ভাবলাম এটা লিখে ফেলি। বিস্তারিতভাবে এর রিভিউ লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আদতে কতখানি সফল তা পাঠকরাই বলবেন :) ----
0 Comments