ভিএআর এর আদ্যোপান্ত-How does VAR work?

 তদিন আমরা ক্রিকেট,রাগবি,হকিসহ আর নানা খেলায় রিভিউ নেওয়ার সুবিধা পেতাম।কিন্তু এতদিন ধরে গোঁ ধরে থাকা ফুটবলও এখন রিভিউ প্রযুক্তির সংস্পর্শে এসে পড়েছে।২০১৮ বিশ্বকাপেই বিশ্ব এই প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়েছে।তবুও আমরা অনেকেই এর কিছুটা বুঝতে পারলেও সম্পূর্ণ বোঝা হয়ে সারেনি।তাই আজ এখানে অল্প কথায় এর মূল বিষয়টুকু সম্বন্ধে জানব আমরা।।

  •  এটি কি?খায়,পরে নাকি মাথায় দেয়?

ভিএআর এর সম্পূর্ণ রূপ হচ্ছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি।নাম দেখে যা বুঝা যায় তা হচ্ছে অতিরিক্ত রেফারি ও সংরক্ষিত ভিডিও দ্বারা রেফারি বা ম্যাচ পরিচালনাকারীকে সহায়তা করা।এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মোট ৪ জনকে নিয়ে হবে ভিএআর প্যানেল যার মধ্যে একজন প্রধান ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি এবং তিনজন সহকারী রেফারি।এরা থাকবেন ভিওআর বা ভিডিও অপারেশন রুমে যেখানে প্রধান ভিএআর একটি মনিটরে মূল ক্যামেরা দিয়ে খেলার ওপর নজর রাখবেন। আরেকটি মনিটরে সুযোগ থাকবে আলাদা চারটি ক্যামেরা থেকে একই ঘটনার ভিডিও দেখার। তিনি ভিএআর দলের নেতৃত্ব দেবেন এবং মাঠের রেফারির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবেন। তাঁর সঙ্গী সহকারী তিনজনের একজন দেখবেন মূল ক্যামেরা, একজনের দায়িত্বে থাকবে অফসাইড ক্যামেরা এবং বাকিজন টেলিভিশন সম্প্রচারকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখবেন।এভাবে প্যানেলটি সহায়তা করতে থাকবে মাঠের রেফারিকে।মূলত এ প্রযুক্তি সহায়তা করে গোল, পেনাল্টি, সরাসরি লাল কার্ড ও সঠিক খেলোয়াড় চিহ্নিত করতে।পাশাপাশি অফসাইড,ফাউল,ফ্রি কিক ইত্যাদি চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।পূর্বে এসবের ক্ষেত্রে রেফারি আর খেলোয়াড়দের মাঝে বাকবিতণ্ডা এবং মারামারির মত ঘটনাও ঘটত।কিন্তু এখন এরকম ঘটনা অনেকাংশে কমান সম্ভব।'ফিফা' সভাপতি জিয়ানলুইজি ইনফান্তিনো এর মতে ফুটবলে সঠিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার হার এখন ৯৫ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।যা ফুটবলের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক।

  • এর নেতিবাচক প্রভাব

ভিএআর এর প্রভাবে খেলার সৌন্দর্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন।তাদের মতে এটি খেলায় সময়ক্ষেপণ করবে এবং খেলার উত্তেজনাকর মুহুর্ত মলীন হয়ে যেতে পারে।আবার একবার পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরও তা বাতিল করলে দর্শকদের মন ভেঙে যেতে পারে যা ফুটবলের মূল সৌন্দর্যে প্রভাব ফেলবে।

কিন্তু তাই বলে তো ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না।তাই এর নেতিবাচক প্রভাব কে একটু দূরে সরিয়েই রাখতে হবে।

  • এটি কাজ করে কিভাবে?

ভিএআর দলের কাছে সম্প্রচারকারীদের মোট ৩৩-৩৭টি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ আসবে। এর মধ্যে আটটি 'সুপার স্লো মোশন ক্যামেরা' ও চারটি 'আলট্রা সুপার স্লো মোশন ক্যামেরা' থাকবে। সঙ্গে থাকবে দুটি বিশেষ অফসাইড নির্ধারণী ক্যামেরা। নকআউট পর্ব থেকে মাঠে দুই গোলবারের পেছনে আরও দুটি 'আলট্রা সুপার স্লো মোশন ক্যামেরা' স্থাপন করা হবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গোল হয়েছে কি না বা গোলের আগে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে কি না; সরাসরি লাল কার্ড দেওয়ার মতো ঘটনা; পেনাল্টির সিদ্ধান্ত এবং কোনো ফাউল রেফারির চোখ এড়িয়ে গেলে সেটা দেখিয়ে দেওয়া-ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে যেতে পারে এ রকম চারটি ক্ষেত্রে রেফারিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে ভিএআর।গোলের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় গোলকিপার গোললাইনের ভিতর থেকে বল অতি দ্রুততার সাথে বাইরে দিয়ে দেয় যার ফলে রেফারি অত্যন্ত সতর্ক থাকা সত্ত্বেও তিনি সঠিক সিদ্ধান্তটি দিতে পারেন না।এইক্ষেত্রে ভিএআর নেগেটিভ ইফেক্ট দ্বারা শনাক্ত করে যে বলটি গোললাইনের ভিতরে ছিল নাকি বাইরে।যার ফলে গোল হয়েছে কিনা তা সঠিকভাবে জানতে পারে রেফারি।

রেফারি যেমন ভিএআর এর সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত দিতে পারে তেমনি সাইডলাইনের পাশে থাকা মনিটর এ স্লো মোশন দিয়ে নিজ চোখে পুরো ঘটনা দেখে সিদ্ধান্ত দিতে পারে।এই প্রযুক্তি রেফারিকে সম্মান জানিয়ে তার সহযোগিতার জন্যই ব্যবহার করা হয়।তাই নানা বিতর্ক সত্ত্বেও নিঃসন্দেহে এটি একটি অসাধারণ এবং উপকারী প্রযুক্তি।

আর্টিকেলটি ভাল লাগলে শেয়ার করতে ভুলে গেলেও কোনো সমস্যা নেই :D

-তাসনিমুল হাসান প্রত্যয়

Post a Comment

0 Comments